চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা | Chia seeds benefits and side effects
চিয়া সিড কি?
চিয়া সিড হল Salvia hispanica নামক ভোজ্য বীজ যা পুদিনা পরিবারের অন্তর্গত। এই চিয়া সিড মধ্য ও দক্ষিণ মেক্সিকো, দক্ষিণ-পশ্চিম আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকো সম্পর্কিত Salvia columbaria ফুলের উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়।
চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা | |
চিয়া সিড বৈশিষ্ট্য:
আকার ও রঙ: ডিম্বাকৃতি, ধূসর বর্ণের সাথে কালো এবং সাদা দাগযুক্ত, ব্যাস প্রায় ২ মিলিমিটার।
পুষ্টিগুণ:
চিয়া সিড অত্যন্ত পুষ্টিকর খাদ্য। চিয়া সিডে রয়েছে দুধের চেয়েও পাচ গুণ ক্যালসিয়াম, কমলার চেয়েও ৫গুন ভিটামিন সি। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, প্রোটিন, ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, ভিটামিন বি3 (নায়াসিন), পটাশিয়াম, ভিটামিন বি1 (থায়ামিন) ও ভিটামিন বি2 থাকে।
স্বাদ: বাদামের মত হালকা স্বাদ।
চিয়া সিডের ব্যবহার:
- খাবার: চিয়া সিড বিভিন্ন খাবারে ব্যবহার করা যায়, যেমন:দই, সিরিয়াল, ওটমিল পুডিং, স্মুদি রুটি, কেক, মুফিন স্যুপ, সালাদ।
- পানীয়: চিয়া সিড পানিতে ভিজিয়ে চিয়া পুডিং তৈরি করা যায়।
চিয়া সিডের উপকারিতা:
চিয়া বীজ, যা 'সালভিয়া হিস্পানিকা' নামক উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়, 'সুপারফুড' হিসেবে পরিচিত। এতে প্রচুর পুষ্টি উপাদান থাকায় এটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
চিয়া সিডের কিছু উল্লেখযোগ্য উপকারিতা:
১) হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য: ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ, যা হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এলডিএল (খারাপ) কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
২) হাড়ের স্বাস্থ্য: ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাস সমৃদ্ধ, যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
৩) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ইনসুলিনের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৪) ওজন নিয়ন্ত্রণ: খাদ্য আঁশ সমৃদ্ধ, যা দীর্ঘ সময়ের জন্য পেট ভরা রাখে। অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত রাখে। ওজন কমাতে সাহায্য করে।
৫) কোষ্ঠকাঠিন্য দূর : চিয়া সিট ফাইবার সমৃদ্ধ, যা পচন ক্রিয়া উন্নত করতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
৬) ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা ত্বক ও চুলের ক্ষতি রোধ করতে সাহায্য করে। ত্বকের বয়সের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে। চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে।
৭) শক্তি বৃদ্ধি: প্রোটিন এবং ফাইবার সমৃদ্ধ, যা শরীরে শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে। চিয়া বীজ খাওয়ার নিয়ম:
চিয়া বীজ সরাসরি খাওয়া যায়, অথবা দই, ওটমিল, স্মুদি, বা সালাদের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। চিয়া বীজের পুডিং বানিয়েও খাওয়া যায়। দিনে ১-২ টেবিল চামচ চিয়া বীজ খাওয়া যেতে পারে।
সতর্কতা: গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মহিলাদের চিয়া বীজ খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের চিয়া বীজ খাওয়ার সময় রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত।
উল্লেখ্য: চিয়া বীজ একটি স্বাস্থ্যকর খাবার, এটি আপনার ডায়েট খাবারের যুক্ত করতে পারবেন, তবে অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না এবং শরীরের জন্য পরিমাণ মত খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
চিয়া সিড কি? |
চিয়া সিডের অপকারিতা:
চিয়া বীজ, যদিও পুষ্টিকর এবং অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে, কিছু সম্ভাব্য অপকারিতাও রয়েছে।
১. অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া:
চিয়া বীজ কিছু লোকে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। লক্ষণগুলির মধ্যে ফুসকুড়ি, চুলকানি, বমি বমি ভাব এবং এমনকি অ্যানাফিল্যাক্সিস অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
২. হজমের সমস্যা:
চিয়া বীজে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা কিছু লোকে পেট ফোলা, গ্যাস এবং ডায়রিয়ার মতো হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
৩. রক্ত পাতলা হওয়া:
চিয়া বীজ রক্ত পাতলা ওষুধের সাথে মিথস্ক্রিয়া করতে পারে এবং রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
৪. গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের জন্য:
গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মহিলাদের চিয়া বীজ খাওয়ার আগে তাদের ডাক্তারের সাথে কথা বলা উচিত।
৫. অন্যান্য সম্ভাব্য অপকারিতা:
চিয়া বীজ রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে পারে, রক্তচাপ কমাতে পারে এবং কিডনির পাথরের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। চিয়া বীজ খাওয়ার আগে, বিশেষ করে যদি আপনার কোনও স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে, তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ।
কিছু টিপস:
ধীরে ধীরে আপনার খাদ্যে চিয়া বীজ যোগ করুন এবং আপনার শরীরের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করুন।প্রতিদিন ১-২ টেবিল চামচের বেশি চিয়া বীজ খাবেন না। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন যখন চিয়া বীজ খান। যদি আপনি কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অনুভব করেন, চিয়া বীজ খাওয়া বন্ধ করুন এবং আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
চিয়া সিডের বিকল্প:
আপনি যদি চিয়া বীজ খেতে না পারেন, তাহলে আপনি এর পরিবর্তে অন্যান্য খাবার খেতে পারেন যা ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড, ফাইবার এবং প্রোটিনে সমৃদ্ধ। এর মধ্যে রয়েছে:
- তিসি বীজ
- আখরোট
- চর্বিযুক্ত মাছ
- ডাল
- বাদাম
- সবুজ শাকসবজি
চিয়া সিড খেলে কি হয়?
চিয়া সিড খেলে ১) কোলেস্টরেলের মাত্রা কমাতে, রক্তচাপ কমাতে ও সামগ্রিক হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা কর।২) ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখে। ৩) হজম উন্নত করে। ৪) রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ৫) ত্বক ও চুলের জন্য ভালো। ৬) ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। ৭) হাড় মজবুত করে। ৮) শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করে।
উল্লেখ্য: উপরোক্ত এই তথ্যগুলো শুধুমাত্র শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে এবং কোনও চিকিৎসা পেশাদারের পরামর্শের জন্য নয়। চিয়া সিড একটি স্বাস্থ্যকর খাবার। তবে এটি কোনো ঔষধের পরিবর্তে ব্যবহার করা যাবে না।
আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।